সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবীণদের ভূমিকা


সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবীণদের ভূমিকা অনেক,

তবে সমাজে তাঁরাই যেন সবচেয়ে কম মর্যাদা পান, আমরা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিতে তেমন আগ্রহী নই। খাবার গ্রহণে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে। যে কোনো সাফল্যেই খাবারের আয়োজন করতে হয়। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে পেট পুরে ভালো-মন্দ খাইয়ে সাফল্য উদযাপন করা হয়। এমনকি মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর শোকের মধ্যে কুলখানি, শ্রাদ্ধের আয়োজন করতে হয়। সেখানে মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা না হলে আয়োজকরা সমালোচনার সম্মুখীন হন। সবকিছুতেই খাবারের আয়োজন অনিবার্য। প্রবীণদের খাবার-দাবার নিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত ৬০ বছরের ওপর চলে গেলেই আমরা মনে করি, ব্যক্তিটি আর কাজকর্ম করতে পারবেন না, আস্তে আস্তে যত বয়স বাড়তে থাকে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যও তাঁদের থেকে দূরে সরে যান, ক্ষুধার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে প্রবীণ জীবনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। কৈশোর-যৌবনে খাবারের কষ্ট এখনো ভুলতে পারেননি। খাবার দেখলেই মনটা হাহাকার করে ওঠে। সামনে যা পায় তাই খেয়ে নেন; বাছবিচার তেমন একটা করেন না আবার কেউ কেউ আছেন, সারাজীবন ভালোমন্দ খেয়েছেন এখন বিশেষ কোনো পরিস্থিতির জন্য চাহিদামাফিক খাবার পান না। তারাও খাবারের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন।

মানসিক চাপে থাকলে প্রবীণদের মধ্যে খাবার গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্রবীণরা একই হাতের প্রায় একই রকম খাবারে বিরক্ত বোধ করেন। একই রকম সবজি, ডাল, মাছ, মাংস রান্না তাকে তেমন আকৃষ্ট করে না। প্রবীণরা রুচি পরিবর্তন করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কোথাও দাওয়াত পেলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। প্রবীণরা বেড়াতে গেলে সবাই একটু আপত্তি করেন। যেসব খাবার মুখরোচক কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর তা খেতে অনুরোধ করা হয়।





আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবরা বলেন, ‘আরে একদিন খেলে কিছু হয় না। প্রবীণরা কেউ কেউ বিনয়ী হয়ে খাবার গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন কিন্তু চাপাচাপিতে পড়ে খাবার গ্রহণ করেন আবার কেউ নিজ থেকেই খেয়ে নেন এবং বলেন, ‘যা দিব অঙ্গে তাই যাবে সঙ্গে।’ খুব কম মানুষই পারে খাবার টেবিলে নিজকে সংযত রাখতে। প্রবীণদের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফলমূল খেলে শরীর ভালো থাকবে। এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়। আবার পরিবারের প্রবীণ সদস্যটিও অনেক সময় মনে করেন,তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী কোনো কিছুই সন্তানরা পূরণ করতে পারছে না, 

একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে সুস্থ রাখতে হলে সঠিক খাবার নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ,



সাধারণত দেখা যায়, প্রবীণদের খাবার খাওয়ার পর হজমের ধারাবাহিকতায় কিছুটা ঘাটতি থাকে,

অর্থাৎ যে মানুষটি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সব ধরনের খাবার খেতে পারতেন,




প্রবীণ হয়ে গেলে সে আর সব ধরনের খাবার খেতে পারেন না সাধারণত এ বয়সে দেখা যায়,

প্রচুর রোগ হতে পারে, ডায়াবেটিস হতে পারে,হার্টের সমস্যা হতে পারে, প্রেশার হতে পারে,পাকস্থলীর কিছু সমস্যা হতে পারে,খাবার খেলে বমি হয়, খাবার খেলে অরুচি হয়,খাবার নিতে পারে না,



আইবিএস বা ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম থাকে, গ্যাস্ট্রোএন্টেসটাইনাল সমস্যা থাকে, এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল করে প্রবীণদের খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, এমনভাবে করতে হবে যে তাঁর সারা দিনের ক্যালরির চাহিদা পূরণ হয়, এমন খাবার দিতে হবে যেন অল্পতেই ওনার শরীর সেটি গ্রহণ করতে পারে, শোষণ করতে পারে।


অর্থাৎ সহজপাচ্য, কম মসলা, কম গুরুপাক, স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে, তবে ওনার পছন্দ অনুযায়ী খাবার হতে হব, তবে তাঁর রোগ অনুযায়ী যে খাবার তাঁকে নিষেধ করা হবে, সেটি এড়িয়ে যেতে হবে। ধরুন, একজনের ডায়াবেটিস আছে, তিনি মিষ্টি খেতে পারবেন না। তাঁকে মিষ্টি বাদ দিয়ে,তাঁর পছন্দমতো অন্য যেকোনো খাবার দিতে হবে।

তবে এই বয়সে শরীরে চর্বি জমার মাত্রা বেশি থাকে। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, 

যেমন— 

খাসি, গরুর মাংস, ঘি, মাখন, মেওনেজ ইত্যাদি কম খেতে হবে।



প্রবীণদের অনেকেরই খাবারের নিয়ম-কানুন মেনে চলা পছন্দের বিষয় না। পরিবারের সদস্যরা খাবার বিষয়ে পরামর্শ দিলে প্রবীণরা রেগে যান। কেউ কেউ রাগ করে পছন্দের খাবার ছেড়ে দেন। খাবার টেবিলে নীরবে সবজি, ডাল দিয়ে খেয়ে ওঠেন। খোশগল্পে মেতে উঠতে চান না। কিছুটা অভিমান, রাগ, ক্ষোভ নিয়ে খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। প্রবীণদের মধ্যে যেসব প্রবীণ খাবারের কড়াকড়ি পছন্দ করেন না তারা বিভিন্ন উপায়ে খাবার খান।
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাবার-দাবারে কড়াকড়ি থাকায় তারা একটু বেশি নিয়ম ভাঙতে চান। গভীর রাতে ফ্রিজ থেকে পছন্দের খাবার যেমন মিষ্টি, ফিরনি, কেক, কোমল পানীয় খান।


পরিবারের সব সদস্যের জন্য যেমন রান্না হয় প্রবীণের জন্যও ঠিক তেমনি 
হয় অথচ প্রবীণদের স্বাদ গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমতে থাকে।শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও প্রবীণদের জন্য থাকে না। 
উচ্চ রক্তচাপ বেশি থাকলে পনির, লবণজাতীয় খাবারগুলো একদম বাদ দেওয়া উচিত। 

সাধারণত অল্প অল্প করে ব্যক্তি অনুযায়ী দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পর পর দিনে যদি সাত থেকে আট ঘণ্টা খেতে দেওয়া হয়, তাহলে তাদের পাকস্থলীও নিরাপদ থাকবে। ধারাবাহিকভাবে যে খাবার সে নিচ্ছে, সেটি হজম হয়ে আসবে।



 আমাদের সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত, কুলখানি, শ্রাদ্ধ, মেজবান ইত্যাদিতে যে ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় তা মোটেই প্রবীণবান্ধব নয় অথচ প্রবীণরা নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তাদের কথা কেউ ভেবে দেখেন না। মনে করা হয়, একবেলা খাবারে কী এমন ক্ষতি হবে। প্রবীণরা ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না। কেউ কেউ ডায়াবেটিসের রোগী, ফলে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রবীণদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাবার দেয়া হয় না।বাংলাদেশে প্রবীণ জনসংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রবীণরা দীর্ঘায়ু হচ্ছেন। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য প্রবীণবান্ধব খাবারের কথা ভাবতে হবে।
 

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রবীণের পুষ্টি নিয়ে তেমন কেউ এগিয়ে আসছে বলে আমি জানি না। কিন্তু প্রবীণ জীবনে পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে সামর্থ্যবান প্রবীণ সমাজের জন্য বোঝা নয়। প্রত্যেক প্রবীণের জন্য আলাদা আলাদা খাদ্য তালিকা পুষ্টিবিদরা করে দিতে পারেন। পুষ্টিবিদের পরামর্শে প্রবীণ খাবার গ্রহণ করবেন। 

এভাবে যদি আমরা পরিবারের অন্যরা প্রবীণদের প্রতি একটু খেয়াল নিই, তাহলে তাঁদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে,ওনারা কর্মঠও থাকবেন-মনে রাখতে হবে, প্রবীণবান্ধব খাবার প্রবীণের অধিকার। পরিবারে, সমাজে সব অনুষ্ঠানে প্রবীণকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাবার টেবিলে নিতে হবে। প্রবীণের খাবারের  প্রতি নবীনদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।


সাইফুল আবেদীন

Commenti